মোহাম্মদ আলী:
তখন ছিল কুপিবাতির যুগ। তখনো পাথালিয়ার সব ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি। জুবায়ের বাবা ছিলেন একজন দরিদ্র রিকশাচারক। প্রতিদিনই কেরসিন কেনা সম্ভব হতো না। তাই, সবদিনই তাদের ঘরে জ্বলত না বাতি। যেদিন তার পড়ার ঘরে বাতি জ্বলত না সেদিন জুবায়ের বাড়ির পাশে ল্যাম্পপোস্টের আলোর নিচে দাঁড়িয়ে পড়ত। এভাবে দারিদ্র্যতা, অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে বড় হওয়া জুবায়ের আজ বিবিএস ক্যাডার। লাভ করেছে ৩য় স্থান। উজ্জ্বল করেছে মা বাবার মুখ, গ্রামের জন্য বয়ে এনেছে সম্মান।
জামালপুর জেলার পাথালিয়া পুরাতন মৃধা বাড়ির রিকশাচলক বেলাল উদ্দীনের ছেলে জুবায়ের আলম। সংসারে অভাব অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। ভাঙ্গা কুটিরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় কুপি বাতি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করত জুবায়ের। কুপির তেল কিনতে না পারায় মাঝেমধ্যেই রাতে সে রাস্তার পাশে ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে পড়াশোনা করত। কিন্তু, দারিদ্র্যতা তাকে কখনো দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায়ই তাকে আজকের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
জুবায়ের আলম ২০১০ সালে পাথালিয়া হযরত শাহ জামাল (রঃ) স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ+ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে। দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের ফসল হিসেবে জুবায়ের আলম ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষা ক্যাডারে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। বর্তমানে তিনি সরকারি জিয়া মহিলা কলেজ, ফেনীতে প্রভাষক (লেকচারার) হিসেবে কর্মরত আছেন।
জুবায়ের আলম শুধু তাঁর পরিবারের নয়, বরং আজ সে পুরো পাথালিয়া গ্রামের গর্ব।
জুবায়েরের জীবন সংগ্রাম প্রমাণ করেছে লক্ষ্যজয়ের অদম্যইচ্ছাশক্তি ও কঠোর অধ্যাবসায় থাকলে দারিদ্র্যতা কোনো বাঁধা নয়।